হুমায়ুন আহমেদ – একটি নাম, একটি ইতিহাস। বাংলা সাহিত্যের একজন কিংবদন্তী। নাটক, গল্প, উপন্যাস, সিনেমা – যেদিকে হাত দিয়েছেন সেখানেই ফলেছে সোনা। তার প্রতিটি কাজ, প্রতিটি লেখনী মানুষের কাছে হয়েছে জনপ্রিয়, পাঠকদের কাছে হয়েছে স্বপ্নের বাস্তব। মাত্র ৬৪ বছরের জীবনে নিজেকে স্থাপন করেছেন বাংলা সাহিত্যের নতুন জগতের সম্রাট হিসেবে। আজ ব্রাকেট পোষ্টের পাঠকদের জন্য আজ থাকছে হুমায়ুন আহমেদের জনপ্রিয় ও সেরা ৫ টি বই নিয়ে আলোচনা।
০১। শংখনীল কারাগার ১৯৭৩
শঙ্খনীল কারাগার হুমায়ূন আহমেদের প্রাথমিক লেখক জীবনের একটি সমকালীন উপন্যাস। এটি বাংলাদেশ সৃষ্টির পরেই খান ব্রাদার্স, অন্যপ্রকাশ প্রকাশনী থেকে প্রথম ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৯২ সালে শঙ্খনীল কারাগার নামে উপন্যাসের কাহিনী নিয়ে চলচ্চিত্র মুক্তি পায়।
চরিত্র
খোকা (কথক)
রাবেয়া
মন্টু
রুনু
ঝুনু
কিটকি
নিনু
ওভারশীয়ার কাকু
সুহাসিনী মাসি
শিরিন সুলতানা (খোকার মা)
খোকার ছোটখালা
খোকার বড়মামা, মনসুর
আজহার হোসেন (খোকার বাবা)
আবিদ হোসেন (রাবেয়ার আসল বাবা)
কাহিনী সংক্ষেপ
উপন্যাসের মূল কথক ‘খোকা’। তারা মোট ছয় ভাইবোন। তার বড় বোন রাবেয়া। তার বাবা আর রাবেয়ার বাবা ভিন্ন দুই ব্যক্তি। রাবেয়ার মায়ের আগে এক ধনী ব্যাক্তির সাথে বিয়ে হয়েছিল। সেই পরিবারে জন্মায় রাবেয়া। রাবেয়ার বাবার সাথে রাবেয়ার মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
খোকার ছোট ভাই মন্টু লেখাপড়ায় অমনোযোগী। কিন্তু সে একজন কবি। তার চমৎকার সব কবিতা ছাপা হতো পত্রিকায়। এভাবেই দিন চলে যেতে থাকে তাদের। কাছের মানুষগুলো ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে থাকে। রাবেয়া শহরের এক মহিলা হোস্টেলের সুপারিন্টেনডেন্ট হয়ে পরিবার থেকে কিছুটা দূরে চলে যায়। মন্টুও তার সদ্য যৌবনের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর খোকা ক্রমেই পুরানো দিনের প্রাচুর্যের স্মৃতি অন্তরে জমিয়ে রেখে নিঃসঙ্গতার বেদনায় ডুবতে থাকে।
০২। মেঘ বলেছে যাব যাব ১৯৯৭
মেঘ বলেছে যাব যাব হুমায়ূন আহমেদের একটি উপন্যাস। ১৯৯৭ সালের বইমেলায় উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯৯৭ সালে অবসর প্রকাশনা বইটি প্রকাশ করে।
চরিত্রসমূহ
হাসান – প্রধান চরিত্র
তিতলী – হাসানের প্রেমিকা
তারেক – হাসানের ভাই
রীনা – তারেকের স্ত্রী
লাবনী – তারেকের কলিগ
লায়লা – হাসানের বোন
হিশামুদ্দিন – কোটিপতি ব্যবসায়ী
চিত্রলেখা – হিশামুদ্দিনের মেয়ে
সুমি – হাসানের ছাত্রী
শওকত – তিতলীর স্বামী।
নাদিয়া – তিতলীর বোন
হাসানের মা-বাবা, তারেকের দুই ছেলে, তিতলীর মা-বাবা, লায়ালার স্বামী
কাহিনী সংক্ষেপ
হাসান একজন বেকার। তবে পুরো পুরি নয়। কোটিপতি হিশামুদ্দিনের জীবনী সে লিখছে। প্রতি বুধবারে হিশামুদ্দিন সাহেব হাসানকে এক ঘণ্টা করে জীবনী বলবেন বলে কথা হয়েছিল। প্রতি ঘণ্টা ৬০০ টাকা হিসেবে দেওয়ার কথা থাকলেও হিশামুদ্দিন সাহেব কখনো তাকে এক ঘণ্টা সময় দেন না। তবে হিশামুদ্দিন সাহেব হাসানকে অনেক পছন্দ করতেন। একসময় তিতলীদের পাশের বাসায় থাকত হাসানের পরিবার। সেই থেকে তাদের পরিচয়। পরে একে অপরকে ভালোবেসে ফেলে তারা। তবে হাসান বেকার হওয়ায় তিতলীর বাবা মতিন সাহেব ব্যপারটা পছন্দ করত না।
চিত্রলেখা তার বাবার অফিসে বসতে শুরু করে। সেখানেও নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তাকে। একসময় নেপাল বেড়াতে যায় তিতলী আর শওকত। সেখানে এক সকালে নিজেকে শওকতের কাছে বিলিয়ে দেয় তিতলী। অন্যদিকে হাসানের ব্রেন টিউমার ধরা পরে।
০৩। আমিই মিসির আলী ২০০০
হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্রগুলোর মধ্যে মিসির আলি বেশ জনপ্রিয়। মিসির আলি কাহিনীগুলোও বেশ থ্রিলিং। মিসির আলি সিরিজের বইগুলোর মধ্যে আমিই মিসির আলি দ্বাদশ প্রকাশনা। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একুশে বই মেলায় অন্যপ্রকাশ প্রকাশনী হতে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়।
চরিত্রসমূহ
মিসির আলি
মাহাবা বেগম লিলি
এস. সুলতান হক – লিলির স্বামী
বরকত – লিলিদের বাড়ির দারোয়ান
অশ্বিনী রায় – লিলিদের বাড়ির আদি মালিক ও সিরিয়াল কিলার
সালমা – স্যাম্পল নাম্বার ৭
কাহিনী সংক্ষেপ
মিসির আলির টেকনাফ বেড়াতে যাওয়ার কথা থাকলেও লিলির স্বামীর টোপ গিলে তিনি চলে গেলেন এস.সুলতান হকের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে সামান্য অভিভূত হলেন কিন্তু সেখানে তাকে আটকে রাখা হল। তিনিই ছিলেন সুলতানের গবেষণার সাবজেক্ট। মিসির আলিকে ভয় দেখানোর জন্য সালমা নামের এক পনের-ষোল বছর বয়সী কিশোরীকে বলি দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে মিসির আলি তাকে বাঁচানোর চেষ্টা শুরু করেন।
০৪। জোছনা ও জননীর গল্প ২০০৪
জোছনা ও জননীর গল্প বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে হুমায়ুন আহমেদ রচিত একটি উপন্যাস। ফেব্রুয়ারি ২০০৪ সালে একুশে বইমেলায় বাংলাদেশের অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়।
উপন্যাসের কাল্পনিক চরিত্রসমুহ
শাহেদ – এটিও বাস্তব একটি চরিত্র তবে উপন্যাসে লেখক সত্যের সাথে কল্পনা যোগ কয়েছেন
ইরতাজউদ্দিন – শাহেদের বড় ভাই
আসমানী – শাহেদের স্ত্রী
রুনি – শাহেদের মেয়ে
গৌরাঙ্গ – শাহেদের বন্ধু
মোবারক হোসেন – নাইমুলের শ্বশুর এবং পুলিশ ইন্সপেক্টর
নাইমুল – শাহেদের বন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধা
মরিয়ম – নাইমুলের স্ত্রী ও মোবারক হোসেনের কন্যা
কলিমুল্লাহ – কবি
কাহিনী প্লট
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সংঘটিত লেখকের নিজ জীবনের এবং নিকট সম্পর্কিত ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন ব্যক্তির বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা তিনি উপন্যাসিক আঙ্গিকে এতে ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রকাশের পর থেকে বহুবার বইটি একুশে বইমেলার বেস্ট সেলিং বইয়ের তালিকায় প্রথম সারিতে ছিল।
০৫। দেয়াল ২০১২
দেয়াল লেখক হুমায়ুন আহমেদ রচিত সর্বশেষ উপন্যাস। লেককের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট ভিত্তিক উপন্যাস। এটি তার রচিত সর্বশেষ উপন্যাস যা তার মৃত্যুর ১ বছর পর অন্যপ্রকাশ প্রকাশনী থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
কাহিনী ও চরিত্র সংক্ষেপ
দেয়াল উপন্যাসটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের পটভুমিতে রচিত। এখানে লেখক বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে সমসাময়িকভাবে নিজেকেও উপস্থাপন করেছেন। এই উপন্যাসের কয়েকটি চরিত্র হল: অবন্তি , শফিক, সরফরাজ খান, ইসাবেলা, পীর হামিদ কুতুবি, ক্যাপ্টেন শামস, হাফেজ জাহাঙ্গীর, মেজর ফারুক, মেজর ইশতিয়াক, শেখ মুজিবুর রহমান, খালেদ মোশাররফ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান, কর্নেল তাহের, মোশতাক আহমেদ, তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ডোরা রাসনা, ছানু ভাই, আওয়ামী লীগার মোজাম্মেল, মেজর নাসের, মেজর রশীদ, আন্ধা পীর, মেজর ডালিম, ভারতীয় গুপ্তচর কাও, রাধানাথ, চা বিক্রেতা কাদের মোল্লা, শামীম শিকদার প্রমুখ।