পাকা আম – পুষ্টিগুণে ভরপুর দেশী ফল 0 3268

পাকা আমের পুষ্টিগুন

চলছে আমের মৌসুম। আর পছন্দের তালিকায় সবারই কমবেশি আম পছন্দ। কাঁচা আম ও পাকা আম উভয়ই যেমন মজাদার, ঠিক তেমনি পুষ্টিসমৃদ্ধ। স্বাদে গন্ধে ভরা এই ফলটি সংরক্ষণ করে রাখা যায় বিভিন্ন উপায়ে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আমের শরবত বা জুস, মোরব্বা, আচার, জ্যাম, জেলি, আমসত্ব ইত্যাদি।

কাঁচা/ পাকা আমে আছে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ লবণ, আঁশ ইত্যাদি। নানা পুষ্টি উপাদানে ভরপুর আম, যা শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি কর্মশক্তি যোগাতেও সহায়তা করে। এর পুষ্টি উপাদান শরীরের নানাভাবে শক্তি যুগিয়ে ও ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে মানবদেহ সুস্থ রাখতে সহায়ক।

পাকা আমে কি কি উপদান আছে?

ক্যারোটিনের মাত্রা পাকা আমে বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম আমে ২৭৪০ মাইক্রো গ্রাম ক্যারোটিন থাকে। এতে ১.৩ গ্রাম আয়রন, ১৪ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম, ১৬ মি.গ্রা. ফসফরাস, ১৬ মি.গ্রা. ভিটামিন সি, ০.৯ মি.গ্রা. রিভোফ্লেভিন এবং ০.০৮ মি.গ্রা. থায়ামিন থাকে। এছাড়াও পাকা আমে রয়েছে ভিটামিন বি-১ ও বি-২। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ০.১ মি.গ্রা. ভিটামিন বি-১ ও ০.০৭ মি.গ্রা. বি-২ রয়েছে।

প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ০.৫ গ্রাম খনিজ লবণ থাকে। এতে কিছু পরিমাণ প্রোটিন ও ফ্যাট থাকে। যেমন- প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ১ গ্রাম প্রোটিন ও ০.৭ গ্রাম ফ্যাট থাকে। আম শ্বেতসারের ভালো উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ২০ গ্রাম শ্বেতসার পাওয়া যায়।

পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা

আমের পুষ্টিগুন

* আমের ক্যারোটিন চোখ সুস্থ রাখে, সর্দি-কাশি দূর করে।

* এর পটাশিয়াম রক্ত স্বল্পতা দূর করে ও হৃদযন্ত্র সচল রাখতে সাহায্য করে।

* ক্যালসিয়াম হাড় সুগঠিত করে, হাড় ও দাঁতের সুস্থতা বজায় রাখে।

* কার্বোহাইড্রেট কর্মশক্তি যোগায়।

* আম কোলন ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, রক্তস্বল্পতা ও প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।

* আমের আয়রন অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে।

* আম থেকে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ভিটামিন সি স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে। দাঁত, মাড়ি, ত্বক ও হাড়ের সুস্থতা রক্ষা করতেও সাহায্য করে ভিটামিন সি।

* এই ফলের আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা হজমে সহায়তা করে। কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে।

* দেশী আম রক্তে কোলেস্টেরলের ক্ষতিকর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

অনেকেই মনে করেন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের দেশী ফল যেমন, পাকা আম খাওয়া ঠিক নয়, এটা ভুল ধারণা। পরিমিত পরিমাণ আম খেলে শরীরে শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা পরিমিত পরিমাণে পাকা আম খেতে পারেন।

খালি পেটে পাকা আম খাওয়া যাবে?
পাকা আমেও কিন্তু কৃত্রিম শর্করা থাকে। সকালে জলখাবারের সঙ্গে আম খাওয়া যাবে না। খালি পেটে আমের মতো মিষ্টি ফল খেলে তা এক লাফে রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেকটা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই জালখাবার খাওয়ার বেশ কিছু ক্ষণ পর বা বিকেলে আম খাওয়া যেতে পারে।

পাকা আম বেশি পরিমানে খেলে কি হয়?
অনেক বেশি পরিমাণে দেশী আম খেলে কিছু সমস্যাও হতে পারে। আমে চিনি ও ক্যালরি বেশি থাকার কারণে আপনার ওজন বাড়তে থাকবে। যেমন ১০০ গ্রাম আমে প্রায় ৬০ ক্যালরি আছে, ১ কেজিতে ৬০০, ৪ কেজিতে ২ হাজার ৪০০ ক্যালরি, যা হয়তো আপনার সারা দিনে শরীরের মোট ক্যালরির সমান।

Previous ArticleNext Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে যেসব খাবার 0 822

কোলেস্টেরল কমানোর ঘরোয়া উপায়

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সবুজ ও কালো চা রক্তের কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তের জমাট বেঁধে যাওয়া প্রতিহত করে। সবুজ চায়ের কেটচিনস এবং কালো চায়ের থিফলেভিনস নামের উপাদান এভাবেই দেহকে বিভিন্ন কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখে।

বেশি কোলেস্টেরল মানেই উচ্চ রক্তচাপ। এ কারণে দুটোকেই নীরব ঘাতক বলা হয়। নীরব বলার কারণ হলো, আপনি হয়তো টেরও পাবেন না যে ভয়ংকর মাত্রায় কোলেস্টেরল নিয়ে ঘুরছেন আপনি। অগোচরে ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। তাই নিজ উদ্যোগেই নিজের কোলেস্টেরলের মাত্রা পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।

ঝুঁকি

কোলেস্টেরলের আধিক্যজনিত কারণে হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ ও বুকে ব্যথার মতো সমস্যা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। এ জন্য ওষুধপথ্যসহ জীবনযাপন পরিবর্তনের নানা পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রতিরোধ

কাজেই আগে থেকে প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণই বুদ্ধিমানের কাজ। সচেতন হয়ে কোলেস্টেরলের আনাগোনা ঠেকিয়ে রাখতে হবে। সুষম খাদ্য তালিকাকে অবহেলা করা যাবে না।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখবে যেসব খাবার

জইচূর্ণ বা ওটমিল চেনেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। সচরাচর ওজন কমানোর জন্য অনেকেই ওটমিল খেয়ে থাকলেও এই খাবারটির অন্যতম গুণ হলো, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখা।

এ ছাড়া ডায়াবেটিস, হৃদরোগ কিংবা মাইগ্রেন এর মতো বহু জটিল রোগও নিয়ন্ত্রণে রাখে ওট। গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরল রয়েছে- এমন ব্যক্তিরা প্রতিদিন মাত্র তিন গ্রাম ওট খেলে খুব দ্রুত তাদের দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক হয়।

সয়াবিন

সয়াবিনে থাকা আমিষ বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগকে দূরে রাখে। এর হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়া নামের উপাদানটি রক্ত থেকে দূষিত কোলেস্টেরল-এলডিএল তাৎপর্যপূর্ণ রকম কমিয়ে ফেলে এবং রক্তের ভালো কোলেস্টেরল-এইচডিএল বাড়িয়ে দেয়। ধমনিতে জারণ প্রক্রিয়া প্রতিহত করতে দূষিত কোলেস্টেরলের জারণ রোধ করে।

সবুজ চা

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, চা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। সবুজ ও কালো চা রক্তের কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তের জমাট বেঁধে যাওয়া প্রতিহত করে। সবুজ চায়ের কেটচিনস এবং কালো চায়ের থিফলেভিনস নামের উপাদান এভাবেই দেহকে বিভিন্ন কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখে।

বার্লি

সুস্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ করে হূৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখার অনন্য উপাদান হলো বার্লি। রক্তে কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষেত্রে জইয়ের চেয়েও বেশি কার্যকর এই বার্লি। রক্তে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল থাকলে তা ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনার ক্ষমতা রাখে বার্লি।

ইসবগুল

কোলেস্টেরলের যৌগে থাকা বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর উপাদান দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ইসবগুলের ভুসি। উচ্চমাত্রার আঁশজাতীয় এই খাবারটি সুস্থ রাখে হূৎপিণ্ডকে।

কমলার রস

টকমিষ্টি স্বাদের কমলার রস কোলেস্টেরল কমানোয় অত্যন্ত উপকারী। গবেষকরা জানিয়েছেন, কমলার রস হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়া রক্তের লিপিড প্রোফাইলের উন্নতি ঘটায়। এর কারণ হচ্ছে- কমলার রসে ভিটামিন সি, ফোলেট এবং হেসপিরিডিনের মতো ফ্লেভনয়েড থাকে।

কাঠবাদাম

হৃদস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ফাইবার থাকে কাঠবাদামে, যা ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএলের মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ২০১১ সালে নিউট্রিশন রিভিউতে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, কাঠবাদামের মতো গাছের বাদাম খাওয়া এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে সাহায্য করে। এর ফলে করোনারি ডিজিজ হওয়ার ঝুঁকি ৩ থেকে ৯ শতাংশ কমে।

এছাড়াও পাকা আম, তালমাখনা কিংবা কালোজিরা গুড়া ও আমলকি রক্তের কোলেস্টেরলকে কমানোর জন্য অনেক উপকারী।

ধুমপায়ীর ঠোটের কালো দাগ দূর করার উপায় 0 921

ঠোটের কালো দাগ দূর করার উপায়

ধূমপান এটি বদঅভ্যাস। ধূমপানের অভ্যাসের ফলে শ্বাসনালী বা ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি হয়। সাথে সাথে আরো নানা রকম জটিল রোগ শরীরে বাসা বাধে। মূলত ধূমপানের ফলে ঠোঁট কালো হয়ে যায়। যারা ধূমপান করেন তাদের বেশির ভাগেরই ঠোঁটে কালচে ছোপ পড়ে যায়। যার ফলে ধুমপায়ীরা ঠোঁটের কালো দাগ দূর করার উপায় খুঁজতে থাকেন।

ঠোটের কালো দাগ দূর করার উপায়

ধুমপায়ীদের মধ্যে ঠোঁটের কালো দাগ দূর করার উপায় জানার প্রবণতা আছে। সেই সাথে যেকোন মূল্যে নিজেদের আকর্ষনীয় করে তুলতে চান প্রতিনিয়ত। কালো দাগ দূর করে ছেলেদের/ মেয়েদের ঠোঁট গোলাপি করার উপায় জেনে নেই এক নজরেঃ

লেবু-চিনি

লেবুর পাতলা একটি টুকরোর উপরে খানিকটা চিনি ছড়িয়ে দিয়ে রোজ ঠোঁটে মালিশ করুন। চিনি এখানে স্ক্র্যাবের কাজ করবে। চিনি ঠোঁটের মরা চামড়াগুলোকে ঘষে তুলে দিতে সাহায্য করে। আর লেবু ঠোঁটের কালো হয়ে যাওয়া চামড়াকে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এটা কালো ঠোঁট গোলাপি করার সহজ উপায়।

গ্লিসারিনলেবুর রস

লেবুর রসের সঙ্গে খানিকটা গ্লিসারিন মিশিয়ে প্রতিদিন অন্তত দুবার করে ঠোঁটে মাখুন। দিন দশেকের মধ্যেই উপকার চোখে পড়বে। এটা ঠোঁট কালো দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম।

মধু-চিনি-বাদাম তেল

মধু, চিনি আর বাদামের তেল একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটি দিয়ে নিয়মিত ঠোঁটে মালিশ করুন। এই মিশ্রণ আপনার ঠোঁটের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তার কোমলতাও বাড়াবে।

টমেটোর রস

প্রতিদিন অন্তত দু’বার করে টমেটোর রস ঠোঁটে মাখুন। এতে আপনার ঠোঁট উজ্জ্বল হবে। কমে যাবে ঠোটের কালচে দাগ এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যেই।

চিনি-মধু

মধুর আর চিনির সঙ্গে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মিশিয়ে মিনিট দশেক আলতোভাবে ঠোঁটে মাখুন। এই মিশ্রণ আপনার ঠোঁটকে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।

দুধ-টক দই

ঠোঁটকে উজ্জ্বল করতে ল্যাকটিক অ্যাসিড খুবই উপকারী। দুধ বা টক দইয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ল্যাকটিক অ্যাসিড। দুধ বা টক দই তুলোয় নিয়ে প্রতিদিন অন্তত দু’বার করে ঠোঁটে মালিশ করুন। এটি ঠোঁটের মরা চামড়াগুলোকে ঘষে তুলে দিতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে ঠোঁটের কালচে ভাব দূর করতেও সাহায্য করে।

প্রাকৃতিকভাবেই ঠোটের কালো দাগ দূর করার উপায় বের করা উচিত। ঠোঁট গোলাপি করার ঔষধ, ঠোঁট গোলাপি করার ক্রিম কিংবা ঠোঁট গোলাপি করার লিপবাম সহ অনেক কিছুই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তবে প্রাকৃতিক ভাবেই চিকিৎসা নেয়ার দিকেই ডাক্তারদের পরামর্শ থাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।

আরো পড়ুনঃ অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তির ঘরোয়া সমাধান