চলছে আমের মৌসুম। আর পছন্দের তালিকায় সবারই কমবেশি আম পছন্দ। কাঁচা আম ও পাকা আম উভয়ই যেমন মজাদার, ঠিক তেমনি পুষ্টিসমৃদ্ধ। স্বাদে গন্ধে ভরা এই ফলটি সংরক্ষণ করে রাখা যায় বিভিন্ন উপায়ে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আমের শরবত বা জুস, মোরব্বা, আচার, জ্যাম, জেলি, আমসত্ব ইত্যাদি।
কাঁচা/ পাকা আমে আছে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ লবণ, আঁশ ইত্যাদি। নানা পুষ্টি উপাদানে ভরপুর আম, যা শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি কর্মশক্তি যোগাতেও সহায়তা করে। এর পুষ্টি উপাদান শরীরের নানাভাবে শক্তি যুগিয়ে ও ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে মানবদেহ সুস্থ রাখতে সহায়ক।
পাকা আমে কি কি উপদান আছে?
ক্যারোটিনের মাত্রা পাকা আমে বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম আমে ২৭৪০ মাইক্রো গ্রাম ক্যারোটিন থাকে। এতে ১.৩ গ্রাম আয়রন, ১৪ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম, ১৬ মি.গ্রা. ফসফরাস, ১৬ মি.গ্রা. ভিটামিন সি, ০.৯ মি.গ্রা. রিভোফ্লেভিন এবং ০.০৮ মি.গ্রা. থায়ামিন থাকে। এছাড়াও পাকা আমে রয়েছে ভিটামিন বি-১ ও বি-২। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ০.১ মি.গ্রা. ভিটামিন বি-১ ও ০.০৭ মি.গ্রা. বি-২ রয়েছে।
প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ০.৫ গ্রাম খনিজ লবণ থাকে। এতে কিছু পরিমাণ প্রোটিন ও ফ্যাট থাকে। যেমন- প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ১ গ্রাম প্রোটিন ও ০.৭ গ্রাম ফ্যাট থাকে। আম শ্বেতসারের ভালো উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ২০ গ্রাম শ্বেতসার পাওয়া যায়।
পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা
আমের পুষ্টিগুন
* আমের ক্যারোটিন চোখ সুস্থ রাখে, সর্দি-কাশি দূর করে।
* এর পটাশিয়াম রক্ত স্বল্পতা দূর করে ও হৃদযন্ত্র সচল রাখতে সাহায্য করে।
* ক্যালসিয়াম হাড় সুগঠিত করে, হাড় ও দাঁতের সুস্থতা বজায় রাখে।
* কার্বোহাইড্রেট কর্মশক্তি যোগায়।
* আম কোলন ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, রক্তস্বল্পতা ও প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
* আমের আয়রন অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে।
* আম থেকে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ভিটামিন সি স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে। দাঁত, মাড়ি, ত্বক ও হাড়ের সুস্থতা রক্ষা করতেও সাহায্য করে ভিটামিন সি।
* এই ফলের আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা হজমে সহায়তা করে। কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে।
* দেশী আম রক্তে কোলেস্টেরলের ক্ষতিকর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
অনেকেই মনে করেন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের দেশী ফল যেমন, পাকা আম খাওয়া ঠিক নয়, এটা ভুল ধারণা। পরিমিত পরিমাণ আম খেলে শরীরে শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা পরিমিত পরিমাণে পাকা আম খেতে পারেন।
খালি পেটে পাকা আম খাওয়া যাবে?
পাকা আমেও কিন্তু কৃত্রিম শর্করা থাকে। সকালে জলখাবারের সঙ্গে আম খাওয়া যাবে না। খালি পেটে আমের মতো মিষ্টি ফল খেলে তা এক লাফে রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেকটা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই জালখাবার খাওয়ার বেশ কিছু ক্ষণ পর বা বিকেলে আম খাওয়া যেতে পারে।
পাকা আম বেশি পরিমানে খেলে কি হয়?
অনেক বেশি পরিমাণে দেশী আম খেলে কিছু সমস্যাও হতে পারে। আমে চিনি ও ক্যালরি বেশি থাকার কারণে আপনার ওজন বাড়তে থাকবে। যেমন ১০০ গ্রাম আমে প্রায় ৬০ ক্যালরি আছে, ১ কেজিতে ৬০০, ৪ কেজিতে ২ হাজার ৪০০ ক্যালরি, যা হয়তো আপনার সারা দিনে শরীরের মোট ক্যালরির সমান।