জামায়াতের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি বলে খ্যাত সাতক্ষীরা-২ আসন সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও সাতক্ষীরা পৌরসভা নিয়ে গঠিত। ১৯৯১ সালে দেশে আবার সংসদীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছয়বারের মধ্যে এ আসনে জামায়াত জিতেছে তিনবার, জাতীয় পার্টি একবার এবং আওয়ামী লীগ দুবার। বর্তমানে এ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। তাঁকে নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীরা অস্বস্তিতে আছেন বলে জানা গেছে।
অন্য সংসদীয় আসনের মতো সাতক্ষীরা-২ আসনেও নির্বাচনী তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। গণসংযোগ বাড়ছে বিভিন্ন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের। তবে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি, গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর খড়্গহস্ত এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এতে অনেকেই অতিষ্ঠ। ফলে এখানে আওয়ামী লীগ কিছুটা বেকায়দায়। অন্যদিকে নির্বাচন নিয়ে আপাতত ভাবছে না বিএনপি-জামায়াত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করছেন নেতারা।
মোস্তাক আহমেদ রবি ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর সদর উপজেলার ১৩৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী নিয়োগে ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। রয়েছে আরও নানা অনিয়মের অভিযোগ। এই প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় অনেক নেতা-কর্মী। এসব বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানার জন্য মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মোস্তাক আহমেদ রবি ধরেননি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের অন্যতম দাবিদার জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবু। তিনি বলেন, ‘নেতাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে কথা বলা নিষেধ আছে। তবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি এমপির মাধ্যমে বঞ্চিত হয়েছি। গত বছরের জুন মাসে উপজেলা পরিষদে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ আসে। আমি পরিষদের চেয়ারম্যান, তাই তিনি সেই বরাদ্দের ডিও দেননি। অবশেষে সেই টাকা ফেরত গেছে। তাঁর নির্দেশে সরকারি কোনো অনুষ্ঠানে আমি দাওয়াত পাই না। এ ছাড়া টিন, কম্বলসহ সরকারি অনুদান আমার হাতে আসে না।’ এ ছাড়া মনোনয়ন দৌড়ে ছুটছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ও সহসভাপতি আবু আহমেদ।
আসনটিতে অবস্থান শক্ত হলেও ২০১৩ সালে জামায়াত ব্যাপক ধ্বংসাত্মক রাজনীতি করে নিন্দিত হয়। ২০১৪ সালে সরকার গঠনের পরে রাজনৈতিকভাবে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। তবে সংখ্যাগত ও সাংগঠনিক বিবেচনায় এখানে জামায়াত এখনো শীর্ষে রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে নেতা-কর্মীরা তাঁদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব জানান দেন।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমরা এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে ব্যস্ত। সুষ্ঠু ভোট হলে আমরা চারটি আসনেই প্রার্থী দেব।’ এবারও সাতক্ষীরা-২ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী গতবার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক। তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক।
সাতক্ষীরা সদর আসনে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা বরাবরই দুর্বল। ইউনিয়ন ও পৌরসভায় বিএনপির বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলেও জনসমর্থনের দিক থেকে বিএনপির অবস্থান তৃতীয়। এই আসনে বিএনপি থেকে কেউ কখনো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেননি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থান দেখা যায়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলী বলেন, ‘আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না।’
একসময় সাতক্ষীরায় জাতীয় পার্টির বেশ দাপট ছিল। ২০০৮ সালে এম এ জব্বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জেলা জাতীয় পার্টির নেতারা প্রায়ই অভিযোগ করেন, সরকারের সঙ্গে থাকলেও সাতক্ষীরায় জাতীয় পার্টির নেতাদের মূল্যায়ন করে না আওয়ামী লীগ। অভিযোগ যা-ই থাকুক, ভেতরে-ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশু।
নির্বাচন বিষয়ে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশু বলেন, ‘সাতক্ষীরায় জাতীয় পার্টি শক্ত অবস্থান রয়েছে। শুধু সাতক্ষীরা সদরে নয়, চারটি আসনেই আমরা প্রার্থী দেব।’