ঢাকা কি সত্যিই ভাত বিরোধী? 0 508

rice less dhaka hotel

উনিশ বছর ধরে ঢাকায় থেকে একটা ব্যাপার বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করেছি — এই শহরের রেস্তোরাগুলোতে ভাতের সুব্যবস্থা নেই। ঢাকায় কেউ যদি স্রেফ ভাত ভর্তা আর ভর্তা-ভাজি খেতে চায়, তাকে যেতে হবে এক থানা পেরিয়ে অন্য কোনো থানায় কিংবা এক সিটি করপোরেশন থেকে অন্য সিটি করপোরেশনে। ভাতের হোটেল যা আছে, তা একেবারেই নিম্নমানের। যেসব রেস্তোরায় স্বাচ্ছন্দ্যে ভাত খাওয়া যায়; সেসব রেস্টুরেন্টে ভাতের দাম কয়েকগুণ বেশি এবং সেখানে ভর্তা-ভাজি পাওয়া যায় না, পাওয়া গেলেও দাম গলাকাটা। সেসব খাবার হোটেলে ভাতের সাথে বাধ্যতামূলকভাবে গরু-ছাগল-মুরগির মাংসই খেতে হবে, ইলিশ-রুই-কাতল-রূপচাঁদা মাছই খেতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।

কেউ যদি ভাতের সাথে কেবল ডাল আর ভর্তা-ভাজি খেতে চায়; রেস্তোরার কর্মীরা তার সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে, পাঁচবার ডাকলেও কাছে আসে না, কাছে এলেও টেবিলের ওপর খাবারের থালা শব্দ করে ছুড়ে মারে, সালাদ দেয় না, লেবু দেয় না, হাত মোছার টিস্যু দেয় না। ভাত খেতে চাইলে খাবার হোটেলে ঢুকতে হয় চোরের মতো, বেরিয়ে আসতে হয় চোরের মতো। কাচ্চি অর্ডার করলে কিংবা ভাতের সাথে গোমাংস- খাসীর মাংস বা রুই-কাতলা চাইলে কর্মীরা রাজকীয় প্রটোকল দেয়, ‘জো হুকুম জাঁহাপনা’ পর্যায়ের বিনয় নিয়ে খাবার পরিবেশন করে, চাওয়ার আগেই আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র নিয়ে তটস্থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তাকায় অন্তর্মুখী সপ্তদশী লজ্জাবতী নববধূর মতো; গামছাটা দিয়ে কিছুক্ষণ হাত মোছে, কিছুক্ষণ কাঁধে ফেলে, কিছুক্ষণ টেবিল মোছার অভিনয় করে। কর্মীদের ধারণা— যারা ভাতের সাথে কেবল ভর্তা-ভাজি খায়, তাদের বখশিশ/ টিপস দেবার সক্ষমতা নেই; তারা টাকার অভাবে ভর্তা খায়, তারা খুবই গরীব গোছের। এই শহরে এমনকি আটা বা ময়দার সাধারণ রুটিও নেই। এখানে রুটি খেতে চাইলে বাধ্যতামূলকভ্যবে ধরিয়ে দেওয়া হবে ‘নান’ নামক পুরু বস্তা।

তৈলাক্ত খাবার ছাড়া অন্য কিছু খেতে মানা?

ঢাকার রেস্তোরাঁ গুলো যেন তেহারি, মোরগ পোলাও, কাচ্চি আর খিচুড়ির অঘোষিত গুদাম। চতুর্থ শ্রেণি থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণি— সব হোটেলে এই চার প্রজাতির তৈলাক্ত খাবারের ছড়াছড়ি। এই খাবারগুলোয় এত বেশি পরিমাণ তেল আর মশলা ব্যবহার করা হয় যে, টানা তিনবেলা খেলে যে কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হতে বাধ্য। খাবার হোটেলে কেউ তেল-মশলাবিহীন স্বাভাবিক খাবার খেতে চাইলে ঢাকা শহর তার জন্য কোনো সহজ ব্যবস্থা রাখেনি। এই শহরে কোনো ব্যক্তির ঘরে দু-দিন রান্না না হলে দু-দিনের ছয় বেলাই তাকে কাচ্চি-তেহারি খেতে হবে, পকেটে টাকার বান্ডেল নিয়ে ঘুরেও সে ভাতের দেখা পাবে না, ভাত যেন তার জন্য বাঘের চোখের মতো দুর্লভ। অথচ কোলকাতায় দেখে এসেছি মির্জা গালিব স্ট্রিট, মার্কুইস স্ট্রিট, সদর স্ট্রিটের মোড়ে-মোড়ে এমন সব ভাতের হোটেল— যেখানে যে কোনো ধরনের ভর্তা-ভাজি-সবজি পাওয়া যায় মোটে পাঁচ-দশ রুপি দামে, কবজি ডুবিয়ে গোমাংস আর চনার ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে উঠলে বিল একশো রুপিও আসে না, সেখানকার কোনো হোটেলে ভাত চাইলে কর্মীরা রাগী চোখে তাকায় না। সেখানে তিন রুপিতে পাওয়া যায় আটার ছোট্ট রুটি, দশ রুপিতে খাওয়া হয়ে যায় রুটি-সবজি।

ঢাকা তাহলে আসলেই ভাতবিরোধী ?

আমাদের ঢাকা কবে থেকেই যেন ভাতবিরোধী হয়ে গেল? ঢাকার রেস্তোরাঁগুলো থেকে কেন কিংবা কী প্রেক্ষিতে ভাত বা সাধারণ আটার রুটি বিদায় নিল? আটার রুটি আর ভাত মেনুকে ঝেঁটিয়ে ঢাকার খাবার হোটেলগুলো তেহারি-কাচ্চি, পোলাও-খিচুড়ি, নান কীভাবে আস্ফালন দেখানো শুরু করল? এর নেপথ্য ইতিহাস কী? ঢাকার নাগরিকদের সবাই কি তা হলে এখন মুসা বিন শমসেরের মতো ‘অবিশ্বাস্য ধনী’? জানতে মন চায়।

Previous ArticleNext Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনলাইন শপিং আসক্তি নিয়ন্ত্রণে কী করনীয় 0 798

অনলাইন শপিং আসক্তি

ডিজিটাল প্রযুক্তির কারণে এখন অনেক কাজই ঘরে বসে অনলাইনে করা সম্ভব। এমনকি ঘরের প্রয়োজনীয় বাড়ির টুকিটাকি জিনিসপত্র পর্যন্ত কোনো অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট এ অর্ডার দিলে তা একেবারে দরজায় পৌঁছে যায়। কেনাকাটার জন্য আর রোদ, ঝড়-বৃষ্টি কিংবা ভিড়ের মধ্যে চ্যাপ্টা হতে হয় না। বাড়িতে বসেই প্রয়োজনীয় জিনিস অর্ডার দিয়ে হাতের নাগালে পেয়ে যান। এতে অনলাইন শপিং আসক্তি বাড়ছে প্রতিনিয়ত।

নিরাপদ অনলাইন শপিং সময় বাঁচাচ্ছে ঠিক কিন্তু এই কেনাকাটায় যদি নিয়ন্ত্রণ না রাখা যায় তাহলে যেমন অতিরিক্ত খরচ হয় তেমনই অতিরিক্ত অনলাইনে কেনাকাটা অনেকের আসক্তিতে পরিণত হয়। অনেক ক্ষেত্রে এমনও হয় যে কোন ব্যক্তি বুঝতে পারছেন তিনি অনলাইন কেনাকাটায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কিনছেন কিন্তু তারপরেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না। কেন এমন হয়? এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে সাইকোলজি টু ডের একটি প্রতিবেদনে।

সেখানে বলা হয়েছে, অনলাইন কেনাকাটার আসক্তি বাড়তে পারে বিষন্নতা, দুশ্চিন্তা, অনিয়মিত খাওয়া দাওয়া, এমনকি নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার কারণে। অনলাইন শপিং এর সুবিধা যেমন আছে, তেমনি এ ধরনের আসক্তি থেকে নিজেকে বের করে নিতে কয়েকটি সহজ পদ্ধতি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। যেমন –

১. ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন যে শপিং পেজ বা শপিং ওয়েবসাইটগুলিকে লাইক ফলো করে রেখেছেন সেগুলি আনফলো বা আনলাইক করে দিন।

২. যে শপিং অ্যাপগুলি রয়েছে সেগুলিতে সাবস্ক্রাইব করা থাকলে আন সাবস্ক্রাইব করে দিন। এতে সেই ওয়েবসাইট, ফেইসবুক পেজ কিংবা শপিং অ্যাপ আপনাকে তাদের পণ্য সংক্রান্ত আপডেট দেওয়া বন্ধ করবে। হোম পেজে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ঘোরাঘুরিও বন্ধ হবে। যার ফলে সেই পণ্য দেখা মাত্রই কেনার প্রবণতা কমবে।

৩. কোন কিছু কেনাকাটার সময় ক্রেডিট কার্ডের বদলে নগদ অর্থ ব্যবহার করুন। এতে আপনার নিজের কাছে হিসেব থাকবে যে কত টাকা আপনি খরচ করলেন এবং কত টাকা অবশিষ্ট রয়েছে।

৪. প্রতিদিনের খরচ এবং কেনাকাটার খরচ নির্দিষ্ট করুন। মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করুন এটা বলে যে বাজেটের বাইরে আপনি এক পয়সাও কেনাকাটার জন্য ব্যবহার করবেন না। প্রয়োজনে দিনের শেষে নিজের খরচ খাতায় লিখে রাখুন।

আরো পড়ুনঃ অনলাইন শপিং এর ৫ টি সুবিধা>>

ডায়াবেটিক খাদ্যাভ্যাসের ৪ টি প্রচলিত ভুল ধারণা 2 867

wrong idea of food habit

ডায়াবেটিস হলে শুরুতেই খাবারদাবারের ব্যাপারে আশপাশ থেকে অনেকেই সচেতন করতে থাকেন যেন এই রোগে আক্রান্ত হলে সুস্বাদু সব খাবার থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিতে হবে কিন্তু ব্যাপারটি সেরকম নয়। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিক খাদ্যাভ্যাস নিয়ে কিছু প্রচলিত ধারণা আছে যার অধিকাংশই ভুল।

চিনি ডায়াবেটিসের কারণ: আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে চিনি ডায়াবেটিসের কারণ নয়। তবে বেশি চিনিযুক্ত খাবারে সাধারণত ক্যালরি থাকে যা ওজন বাড়িয়ে তুলে ঝুঁকির কারণ হতে পারে তাই চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।

<<যেসব খাবার খেলেও ওজন বাড়ে না>>

বিশেষ খাবার প্রয়োজনঃ সবার মত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের সুষম খাদ্য বজায় রাখতে সচেষ্ট হওয়া উচিত। তাদের জন্য সব সময় পৃথক খাবার প্রস্তুত করার প্রয়োজন নেই। সুষম খাবার হলো স্বাস্থ্যকর চর্বি, শাকসবজি, পূর্ণ শস্য দানা, চর্বিযুক্ত প্রোটিন ইত্যাদি। এগুলো রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। লো-গ্লাইসেমিকযুক্ত খাবার খেতে হবে। এগুলো শরীরে শর্করা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে।

<<যেসব সবজী খেলে মেদ কমবেই>>

প্রোটিন রক্তে সুগার বাড়ায় নাঃ প্রোটিন একটি অত্যন্ত তৃপ্তিকারী ম্যাক্রো-নিউট্রিয়েন্ট, যা আপনাকে খাওয়া-দাওয়ায় পরিপূর্ণ বোধ করাতে সহায়তা করে। এমনকি উচ্চ প্রোটিন ডায়েট ওজন কমাতে পারে। তবে পেশী বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন ঘাটতি পূরণে ব্যবহৃত না হলে ক্যালরিতে রূপান্তরিত হয়, যা ওজন বাড়িয়ে তুলতে পারে। বেশি প্রোটিন খাওয়ার দিকে মনোনিবেশ করার পরিবর্তে সুষম খাবার খাওয়ার দিকে মনোনিবেশ করুন।

<<রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যা খাওয়া জরুরী>>

শর্করা একেবারে বাদ দেয়াঃ না খেয়ে থাকা ডায়াবেটিক রোগীদের হাইপো-গ্লাইসেমিয়ার একটি লক্ষণ। শর্করা আপনার বয়স, ওজন এবং শারীরিক পরিশ্রমের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। এ জাতীয় খাবারের জন্য জটিল শর্করার পাশাপাশি বেশি আঁশযুক্ত খাবারের দিকে মনোযোগ দিন।

পরিশেষে, সঠিক তথ্য জেনে ডায়াবেটিস থেকে দূরে থাকুন, যাপন করুন সুস্থ স্বাভাবিক জীবন।

আরো পড়ুনঃ মেদ কমাতে দড়ি লাফ